ছোট ছোট স্বপ্ন গুলো
ফুশ্… শ… শ…!! না এটা কোনো গাড়ীর টায়ার পাংচারের শব্দ নয়। নয় কোনো প্রকৃতির ডাকে সম্পাদনকৃত ছোট কর্মের আওয়াজ। এটা আসলে মফিজের মোবাইলের রিংটোন! সকাল বেলায় এই অদ্ভুত রিংটোনের শব্দে আরামের ঘুম হারাম করে অত্যন্ত বিরক্ত সহকারে চোখ কচলাতে কচলাতে মফিজ তার ফোনটা রিসিভ করল। অপর প্রান্তের কন্ঠ শুনে মফিজ বুঝতে পারল এটা তার প্রেমিকা কুলসুমের নাম্বার। এত্ত সকালে প্রেমিকা কুলসুমের ফোন পেয়ে মফিজ খুশি না হয়ে খানিকটা আতংকিত হলো। মনে মনে ভাবল কোনো অঘটন ঘটেনি তো?
কিন্তু না কোন অঘটন নয়। অপর প্রান্ত থেকে কুলসুম মিষ্টি হেসে বলল ‘ঈদ মোবারক’।
কথাটা শুনে যেন মফিজের বাসার ছাদে ঝুলে থাকা সিলিং ফ্যানটা হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ল তার মাথায়। আজ যে ঈদ এটা মফিজের খেয়াল-ই ছিল না। (বারো মাস নামাজ-রোজার খবর না রাখলে যেমনটা হয় আর কী!) তো যা-ই হোক মফিজ তড়িঘড়ি করে কুলসুমকে বলল ‘তোমাকে ও ঈদ মোবারক এবং শুভেচ্ছা’।
কুলসুম বলল, ‘শুধু ঈদ মোবারক এবং শুভেচ্ছায় কিন্তু চলবে না’।
‘কেন তোমাকে কি ঈদে অন্যকিছু দেওয়ার কথা ছিল নাকি?’ মফিজের উত্তর।
কুলসুম বলল, ‘হ্যা’।
এবার মফিজ তার গলার স্বরটা নিচু করে অনেকটা নিরীহ আদমের মতো বলল, ‘বিশ্বাস করো, আজকের দিনে তোমাকে দেওয়ার মতো একটা ছেঁড়া দুই টাকার নোট ও আমার পকেটে নাই।’
কথাটা শুনে কুলসুম খিল খিলিয়ে হেসে জবাব দিল, ‘আরে গাধা টাকা দিতে হবে না। আজ তোমাকে আমার আব্বার সাথে দেখা করতে হবে।’
‘কেন বলতো?’ মফিজ বলল।
‘কেন আবার?’ আব্বার সাথে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করার জন্য।’ বলল কুলসুম।
এবার মফিজ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। বলল, ‘ঠিক আছে আমি সকাল ১১টার মধ্যে তোমাদের বাড়িতে আসব।’
এরপর কথামত মফিজ বেলা ১১টায় কুলসুমের বাসায় হাজির হলো।
কুলসুম মফিজকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে দিয়ে সে ভিতরের রুমে চলে গেল। যাবার আগে কুলসুম মফিজকে বলল; ‘শোনো, আমার আব্বা রুমে ঢুকেই তোমাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে। তিনি তোমার সম্পর্কে যা-ই জানতে চাইবে তুমি সবকিছু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলবে। কেমন?’
‘কেন বাড়িয়ে বলব কেন?’ মফিজের উত্তর।
কুলসুম বলল, ‘কেননা আমার আব্বা সবসময় কথা কম কাজ বেশি টাইপের লোকদেরকে একটু বেশি পছন্দ করেন, তাই।’
কুলসুম ভেতরের রুমে প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই হঠাৎ যক্ষার রোগীর মতো কাশতে কাশতে কুলসুমের আব্বা ড্রয়িংরুমের দিকে অগ্রসর হলেন।
রুমে প্রবেশ করেই তিনি মফিজকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন আছো বাবা?’
‘খু… উ… ব… বেশি ভালো’ বলল মফিজ।
কুলসুমের আব্বা: তোমার ফ্যামিলিতে কে কে থাকে?
মফিজ: বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী, ফুফু-খালা, চাচা-চাচী…
কুলসুমের আব্বা: থাক বাবা, বাদ দাও। শুধু বলো তোমরা কয় ভাই-বোন?
মফিজ: ১০ ভাই ১১ বোন।
কুলসুমের আব্বা: তোমার বাবা কী করেন?
মফিজ: আমার বাবা একটা আধাসরকারি অফিসের বিরাট বড় ম্যানেজার।
কুলসুমের আব্বা: তুমি লেখাপড়া করেছো কোথায়?
মফিজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করছি।
কুলসুমের আব্বা: সকালে ঈদের নামাজ পড়েছো?
মফিজ: জি, জামায়াতের সাথেই চার রাকাত ঈদের নামাজ আদায় করছি।
কুলসুমের আব্বা: (অবাক হয়ে) কয় রাকাত নামাজ পড়েছো?
মফিজ: কেন চার রাকাত।
কুলসুমের আব্বা: একটু ভেবে বলো?
মফিজ: জি, ভেবেই বলেছি। চার রাকাত নামাজই পড়েছি।
কুলসুমের আব্বা: বাবা, আমি তোমার পূর্বের সকল কথা মানলেও এই কথাটা কিছুতেই মানতে পারলাম না।
এবার মফিজ কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ল। সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না যে ঠিক কয় রাকাত নামাজ পড়ার কথা বললে কুলসুমের আব্বা খুশি হবেন।
মফিজকে এই অবস্থায় দেখে ভেতরের দরজার আড়াল থেকে কুলসুম হাত দেখিয়ে ইশারায় ২ রাকাত নামাজ পড়ার কথা বলল।
কুলসুমের এমন ইশারায় মফিজ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রাগান্বিত স্বরে চেঁচিয়ে বলল, ‘তোমার কি মাথা খারাপ? দেখছো না চার রাকাতের কথা বলেও তোমার বাবাকে খুশি করাতে পারছি না! যে লোক চার রাকাতে মানছে না সে লোক দুই রাকাতে সন্তুষ্ট হবে কী করে? যত্তোসব…!!’
এরপর নামাজের হিসাব মিলাতে মিলাতে মফিজ নিজের বাসায় উদ্দেশে পা বাড়াল। আর এ দিকে মফিজের চলে যাওয়ার দৃশ্যতে শুধুই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কুলসুম এবং তার আব্বা!